কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ জানুন

টাকা রাখার সবথেকে নিরাপদ জায়গা হল ব্যাংক। কিন্তু আবার বিভিন্ন দেশে ব্যাংক জালিয়াতির অপ্রতাশিত ঘটনার কারণে কোন ব্যাংকে টাকা রাখবো, এই বিষয় নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় থাকি। এই লেখাটিতে কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ এ সম্পর্কে জানানো হবে।

আমাদের কষ্ট করে রোজগার করা টাকা কোন ব্যাংকে রাখা নিরাপদ হবে এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি। এই লেখাটিতে আমরা বাংলাদেশের সব থেকে নিরাপদ ব্যাংক এবং আমাদের জন্য কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণত ব্যাংকগুলো একশ্রেণীর গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে অন্য শ্রেণীর গ্রাহকদের লোন বা ঋণ প্রদান করে, এবং সেখান থেকে সুদ ও মূল টাকা তুলে নেয়।

এই লেখাটি সম্পূর্ণ দেখলে, কোন ব্যাংকে টাকা রাখা আপনার জন্য নিরাপদ হবে এটা নিজেই যাচাই করতে পারবেন। এজন্য আমাদের বেশ কিছু পয়েন্টের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পয়েন্টগুলো হলঃ

১.লোন ডিপোজিট রেশিও (LDR)

এক শ্রেণীর গ্রাহক ব্যাংকে আমানত রাখে, ব্যাংক সেই গ্রাহকের টাকা অন্য শ্রেণীর গ্রাহকদের কাছে ঋণ প্রদান করে বা বিনিয়োগ করে। লোন ডিপোজিট রেশিও (LDR) সুদি ব্যাংক বা কমার্শিয়াল যে ব্যাংক রয়েছে,

এই ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে ৮০% তথা ৮০ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক কিছুটা ব্যতিক্রম, ইসলামী ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করে ৯০% তথা ৯০ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে।

যখন কোন ব্যাংকের লোন ডিপোজিট রেশিও (LDR) ৭০% থেকে ৯০% এর মধ্যে রয়েছে, তাহলে বুঝে নিবেন সেই ব্যাংকটা ভালো ও নিরাপদ। LDR ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করলে দেখতে পাবেন।

২.লোন ক্লাসিফিকেশন

ব্যাংক যাদেরকে ঋণ প্রদান করলো তাদের কাছ থেকে মুল টাকা ও সুদের টাকা সঠিকভাবে উত্তোলন করতে পারছে কিনা। যদি কোন ব্যাংকের লোন ক্লাসিফিকেশন বেড়ে যায় অথবা অনেক কমে যায় সেক্ষেত্রে ব্যাংকটি নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয় না।

লোন ক্লাসিফিকেশন যদি নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড পজিশনে থাকে তাহলে বুঝা যাবে ওই ব্যাংকের টাকা গুলো সুরক্ষিত পর্যায়ে রয়েছে। সাধারণত বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ব্যাংকের লোন ক্লাসিফিকেশনের হিসাব ৬-৮ মাস অন্তর অন্তর বাংলাদেশের জাতীয় পত্রিকা গুলোতে প্রকাশ করে।

৩.শেয়ারের দাম

সাধারণত যারা শেয়ার মার্কেটে ব্যবসা করে, তারা ভালোভাবে জেনে বুঝে শেয়ার ব্যবসার জন্য আগ্রহী হয়। যেই ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দাম বেশি থাকে, সেই ব্যাংকগুলো ভবিষ্যতে ভালো করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

যদি কোন ব্যাংকের শেয়ারের দাম পূর্বের তুলনায় কমে যেতে থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা এই ব্যাংকটিকে একেবারে নিরাপদ বলব না। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সকল ব্যাংক পুঁজিবাজারের আওতায় এসেছে। এর ফলে আপনারা খুব সহজেই অনলাইন থেকে ব্যাংকের শেয়ারের দাম সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।

৪.নেট অ্যাসেট ভ্যালু (NAV)

যেই ব্যাংকের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (NAV) ভালো থাকে, সেই ব্যাংকে টাকা রাখা আপনার জন্য নিরাপদ ও ভালো। এবং যেই ব্যাংকের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (NAV) একটু কম থাকে সেই ব্যাংক পুরোপুরি নিরাপদ হিসেবে গণ্য হবে না।

প্রত্যেকটি ব্যাংকের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (NAV) প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর জাতীয় পত্রিকা গুলোতে ব্যাংক প্রকাশ করতে বাধ্য থাকে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকে টাকা জমা রাখার আগে জাতীয় পত্রিকা থেকে ব্যাংকগুলোর নেট অ্যাসেট ভ্যালু (NAV) যাচাই করে নিবেন।

৫.লেন্থ অফ সার্ভিস

মনে করেন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি ব্যাংক গত ৫ বছর ধরে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে, এবং অন্য একটি ব্যাংক গত ১০-১৫ বছর ধরে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনি কোন ব্যাংকের দিকে সব থেকে বেশি নজর দিবেন?

নিশ্চয়ই যেই ব্যাংকটি ১০-১৫ বছর ধরে গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে সেই ব্যাংকের দিকে নজর দিবেন। তাই আপনারা টাকা জমা রাখার ক্ষেত্রে পুরনো ব্যাংকগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিবেন, কেননা সেগুলো অনেক বছর যাবত বিশ্বস্ততার সাথে গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে।

৬.সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক যাচাই

সাধারণত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যাংক সমূহের ক্ষেত্রে টাকা রাখলে নিরাপদ থাকার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেশি থাকে। তাই বলে বেসরকারি ব্যাংকে টাকা রাখা যাবে না অথবা বেসরকারি ব্যাংকে টাকা রাখলে দেউলিয়া হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।

গত কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের কোন ব্যাংক দেউলিয়া হয়নি এবং দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।

৭.লিকুইডিটি মানি

যখন কোন ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের ডিপোজিটের উপর তুলনামূলক বেশি ইন্টারেস্ট প্রদান করে সেটা ডিপিএস, এফবিআর বা সেভিংস একাউন্ট ইত্যাদি যেই ধরনের একাউন্ট হোক না কেন সেই ব্যাংকের ভিতরে ঘাবলা রয়েছে।

কেননা এই সকল ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ভঙ্গ করে গ্রাহকদের অধিক লাভের লোভ দিচ্ছে। যে সকল ব্যাংকগুলোর লিকুইডিটি মানির সংকট রয়েছে তাদের থেকে দূরে থাকা শ্রেয়।

৮.ব্যাংকের রেটিং

অনেক ফিনান্সিয়াল কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে রেটিং দেয়। এছাড়াও গ্রাহকদের রিভিউ ও ব্যাংকের কার্যক্রমের উপর নির্ভর করে ওই ব্যাংকের রেটিং। সাধারণত গ্রাহকদের মাঝে যেই ব্যাংকের সুনাম রয়েছে, এবং তাদের কার্যক্রম উচ্চমানের, আমরা সেই ব্যাংকগুলোকে বাছাই করবো।

উপরে আমরা ভালো এবং নিরাপদ ব্যাংক যাচাইয়ের ৮টি পদ্ধতি সম্পর্কে জেনেছি। তবে একটি ব্যাংকের মধ্যে উপরের সব পয়েন্টগুলো বিদ্যমান থাকবে এমন নয়। আপনার পছন্দ অনুযায়ী ব্যাংকের তথ্যগুলো যাচাই করে আপনার জন্য ভালো ব্যাংকটি যাচাই করতে পারবেন।

কোন ব্যাংকে একাউন্ট করলে ভালো

যেই ব্যাংকটি আপনার জন্য নিরাপদ হবে, সেই ব্যাংকে একাউন্ট করা ভালো। আমরা পূর্বেই জেনেছি কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ ও ভালো ব্যাংক যাচাই করার উপায় সম্পর্কে। আপনারা উক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনার জন্য নিরাপদ ব্যাংক যাচাই করতে পারেন।

দেশের সবথেকে ভালো অবস্থানে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে Islami Bank Bangladesh Ltd (IBBL) অন্যতম। এছাড়াও ব্রাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সিটি ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকে একাউন্ট করতে পারেন।

কেননা এই ব্যাংকগুলো বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে আসছে, এছাড়াও এই ব্যাংকগুলোর রেটিং যথেষ্ট ভাল। সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলঃ ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে জানুন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরাপদ ব্যাংক

রেটিং, নেট অ্যাসেট ভ্যালু (NAV) ও লোন ক্লাসিফিকেশন সহ অন্যান্য তথ্যের উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের সব থেকে নিরাপদ ব্যাংক গুলো হলোঃ

  • ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
  • ডাচ বাংলা ব্যাংক
  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
  • ব্যাংক এশিয়া
  • সোনালী ব্যাংক
  • অগ্রণী ব্যাংক
  • ব্রাক ব্যাংক
  • পূর্বালী ব্যাংক
  • কৃষি ব্যাংক
  • সিটি ব্যাংক
  • রূপালী ব্যাংক

ইত্যাদি। এখানে শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রথম সারির অল্প কয়েকটি ব্যাংকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর বাহিরেও আরো অনেক ট্রাস্টেড ব্যাংক রয়েছে।

শেষকথা

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার তেমন কোন রেকর্ড নেই। যদি কোন ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হয়, তখন তারা পুনরায় কাম ব্যাক করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা নেয়।

তাই বলা চলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলে, এমন সকল ব্যাংকগুলি মোটামুটি নিরাপদ। আপনার উচিত যে সকল ব্যাংকগুলোর রেটিং ভালো এবং গ্রাহকদের বিশ্বস্ততা অর্জন করেছে, সেই সকল ব্যাংকগুলিতে টাকা জমা রাখা বা একাউন্ট করা।

FAQs

কোন ব্যাংকে টাকা জমা রাখা ভালো?

ধর্মীয় ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশের সব থেকে জনপ্রিয় ও স্থিতিশীল ব্যাংক হিসেবে আমরা Islami Bank Bangladesh Ltd (IBBL) কে এগিয়ে রাখবো। আমার মতে ইসলামী ব্যাংকে টাকা জমা রাখা ভালো।

দেউলিয়া ব্যাংকের তালিকা?

স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার খবর শোনা যায়নি। কোন ব্যাংকের অবস্থা খারাপের দিকে গেলে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতায় পুনরায় ফিরে আসার চেষ্টা করে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *