এক যুগেও জনতা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেননি গ্রাহক
সম্প্রতি ঢাকা পোস্ট থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে ১২ বছরেও জনতা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেননি গ্রাহকরা। ২০১০ সালে ২ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা লোন গ্রহণ করেছিল গ্রাহক। কিন্তু তারপর থেকে তিনি কখনোই লোনের টাকা পরিশোধ করেননি।
ব্যাংক থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও, তিনি লোন পরিশোধ করেননি। এভাবে তাগাদা দিতে দিতে পার হয়ে গেছে ১২ বছর। পরিশেষে পাওনা টাকা না পেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকটি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
এছাড়াও বর্তমানে এই ব্যাংকটি তাদের মূলধনের অনেক অংশ ঋণ খেলাপির মধ্যে আটকে আছে। জনতা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান – জনতা ব্যাংকের ঋণ খেলাপি কমিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।
জনতা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেননি গ্রাহক
জনতা ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, মোঃ মশিউর রহমান নামের ১ গ্রাহক উত্তরা মডেল টাউন জনতা ব্যাংকের কর্পোরেট শাখা থেকে ২০১০ সালে ২ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা লোন গ্রহণ করেন “মেসার্স ফারজানা পেইন্ট এন্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের” অনুকূলে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ওই গ্রাহক এখন পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করেননি। মোঃ মশিউর রহমানের এই লোনের বয়স বর্তমানে ১ যুগেরও বেশি। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরেও ওই গ্রাহক সময়ক্ষেপণ করে আসছিল।
দীর্ঘ ১২ বছর পরে জনতা ব্যাংক ওই গ্রাহকের নামে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলা দায়ের করার পূর্বেও ব্যাংক ওই গ্রাহকের কাছে পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য অনেকবার তাগাদা দিয়েছে, কিন্তু ওই গ্রহের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
জানতে পারেনঃ জনতা ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম।
গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যাংকের ব্যবস্থা
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী উক্ত গ্রাহকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জনতা ব্যাংক ইতিমধ্যে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়ের করেছে। আদালত সবকিছু পর্যালোচনা করে মোঃ মশিউর রহমান (মেসার্স ফারজানা পেইন্ট এন্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক) এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এবং আদালতের নির্দেশে ৪ই সেপ্টেম্বর গত সোমবার তুরাগ থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে উক্ত গ্রাহককে (মোঃ মশিউর রহমান) গ্রেফতার করেন। আরো জানা যায় এই কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের মোট বকেয়া ৩ কোটি ৩১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা।
জনতা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ
শুধু মোঃ মশিউর রহমান নয়, আরো অনেক গ্রাহক আছে যারা জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে এখন পর্যন্ত ঋণের টাকা পরিশোধ করেনি। জনতা ব্যাংকের কর্মরত কর্মচারীদের ভাষ্য অনুযায়ী হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে গ্রাহকরা ফেরত দিচ্ছেন না।
দেশের সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে একসময়ের জনপ্রিয় ব্যাংক হলো জনতা ব্যাংক। সাধারণত ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের প্রধান উৎস ছিল এই ব্যাংকটি। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত হয়ে বর্তমানে জনতা ব্যাংক ঋণ খেলাপির শীর্ষে উঠে এসেছে।
গত কয়েক বছর আগেও এই ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করে হাজার হাজার নতুন উদ্যোক্তারা সফল হয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে এই ব্যাংকটির অবস্থা ভালো নয়। ব্যাংকটির মোট আমানতের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ অর্থ প্রভাবশালী কিছু গ্রাহকের কাছে জিম্মি হয়ে আছে।
জনতা ব্যাংকের ঋণ খেলাপি
পরিসংখ্যান বলে, ১৬ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা গত মার্চ মাস শেষে জনতা ব্যাংকের ঋণ খেলাপির পরিমাণ। জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। যার কারণে বর্তমানে ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের ৩০.৪৩ শতাংশ খেলাপি হয়ে আছে।
এই ব্যাংকটির ৫৯৮ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। দেশের সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে রয়েছে জনতা ব্যাংক। এছাড়াও আরেক পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের মার্চ মাসে ব্যাংকটির মূলধন থেকে ২ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা সংকট রয়েছে।
ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে জনতা ব্যাংকের অবস্থান
একসময়ের জনপ্রিয় বাংলাদেশ জনতা ব্যাংকের রেপুটেশন এর উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে এই ঋণ খেলাপির অ্যামাউন্ট। এই সম্পর্কে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (মোঃ আব্দুল জব্বার) জানান জনতা ব্যাংকের ঋণ খেলাপি কমিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।
এবং যে সকল গ্রাহক দীর্ঘ সময় ধরে ঋণ পরিশোধ করছে না তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি তৎপরতা আরো জোরদার করা হয়েছে। তিনি আরো জানিয়েছেন বৃহত্তম ঋণ খেলাপি গুলোর বিরুদ্ধে জোরালো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আশা করা যায় জনতা ব্যাংক পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে।
আমরাও আশা করি এক সময়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয় সরকারি ব্যাংক “জনতা ব্যাংক পিএলসি” সকল ধরনের ঋণ খেলাপি সমস্যার সমাধান করে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে।